বুয়েট থেকে পাস করে সবার মনে চিন্তা থাকে কি করবে, ক্যরিয়ার কোনদিকে শিফট করবে ইত্যাদি ইত্যাদি। অনেকেই মন স্থির করতে পারে না দেশে থাকবে নাকি বিদেশে যাবে। দেশে থাকলে কি করবে বড় কোম্পানিতে চাকরী করবে নাকি স্টার্টআপে চাকরি করবে নাকি নিজে একটা স্টার্টআপ শুরু করবে। বিদেশে আসলে কি করবে, মাস্টার্স নাকি পিএইচডি। আজকে শুধু বিদেশে উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে বলব। মাস্টার্স নাকি পিএইচডি এটা নিয়ে আগেও অনেক সিনিয়ররা অনেক কিছু বলেছেন। আমি সেই বিষয়ে কিছু বলব না। আমি আজকে লিখছি শুধু ইউএসএতে পিএইচডি করতে আসতে হলে কি কি করতে হবে, কখন করা ভালো, কত খরচ হয় এই নিয়ে।
প্রথমেই বলে রাখি, কথাগুলো একান্ত আমার ব্যক্তিগত ভাবনা। অনেক কথা বা চিন্তার সাথে দ্বিমত থাকতে পারে। সেইক্ষেত্রে পাঠকে নিজের মতামতকেই প্রাধান্য দিবেন।
পিএইচডি কেন করা উচিতঃপিএইচডি কেন করা উচিত নাঃতুমি যদি কোন রিসার্চ ল্যাবে কাজ করতে চাও (গুগল রিসার্চ, ফেসবুক রিসার্চ, অ্যামাজন রিসার্চ, আইবিএম রিসার্চ, ফুজিতসু রিসার্চ) বা একাডেমিয়াতে থাকতে চাও, দেশের বাইরে বা দেশে(পিএইচডি না থাকলে প্রমোশন হবে না) ইউনিভার্সিটির প্রফেসর হতে চাও তাইলে পিএইচডি অবশ্যই দরকার।
পিএইচডি এক দুই দিনের বিষয় না। বিএসসি ডিগ্রি নিয়ে ইউএসএ আসলে ৫-৬ বছর লাগে পিএইচডি শেষ করতে। এতদিন প্যাশন ধরে রাখা চাট্টিখানি কথা না। তাছাড়া ইউএসএ এর আবহাওয়া তে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে অনেকেরই অনেক কষ্ট হওয়ার কথা।
প্রথমে তোমার ডিটারমাইন করা উচিত, তুমি কি করবে। পিএইচডি করবে কি না। এটা চিন্তা করার উত্তম সময় ৪/১ এর শেষ এ। ততদিনে তোমার সিজিপিএ একটা স্ট্যাবল পজিশনে চলে এসেছে। এবং রিসার্চ কি জিনিস তার একটা আংশিক ধারনা তুমি পেয়েছ। আমার সাজশন হল ৪/১ এর টার্ম গ্যাপে জিআরই, টোফেল দিয়ে ফেলা। তাহলে এপ্লাই করার আগ মুহুর্তে আর বাড়তি প্রেশার থাকবে না। এরপর তুমি যদি ডিটারমাইন্ড হও বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আসবে, তাহলে তুমি ৪/১ এর রেজাল্ট দিয়েই এপ্লাই করতে পার। বুয়েটের সিএসই ডিপার্টমেন্ট এর অনেকেই আগে করেছে এটা।
এবার আসি এপ্লাই করার জন্য কি কি করতে হবে। এপ্লাই করার জন্য লাগে তোমার টেস্ট স্কোরগুলো(জিআরই, টোফেল), অফিসিয়াল ট্রান্সক্রিপ্ট (বুয়েটের পাঠানোর কথা! কিন্তু আসলে এক্সাম কন্ট্রোলার স্যারের সাইন নিয়ে তোমাকেই পাঠাতে হবে, এখন অবশ্য অনেক ভার্সিটিতেই হার্ড কপি লাগে না, এপ্লিকেশন সাইটে পিডিএফ আপলোড করলেই চলে), স্টেটমেন্ট অফ পারপাস, এবং ৩ টা রিকমেন্ডেশন লেটার।
আমাকে আমার এক ভাই সমসময় একটা কথা বলত(আমার এডমিশনে যে আমাকে খুব প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করেছে), প্রফেসর(যেই ভার্সিটিতে এপ্লাই করছি, সেখানকার কোন প্রফেসর) যদি এডমিশন এর জন্য রেকমেন্ড করে, তাইলে এডমিশন কমিটি সাধারণত আটকায় না। এজন্য যেই ভার্সিটিতে এপ্লাই করছ, সেই ভার্সিটির প্রফেসরের সাথে যোগাযোগ থাকা একটা প্লাস পয়েন্ট। তবে প্রফেসর কন্টাক্ট থাকা mandatory না ইউএসএ তে।
এবার অন্য প্রসঙ্গে আসি। কোন সেশন টার্গেট করা উচিত। তুমি যদি সিউর হও হায়ার স্টাডিতে যাবে, তাহলে “The sooner, the better.” কারণ, যদি Procrastinate করবে, তোমার মধ্যে তত Lethargy চলে আসবে। মনে কর, তুমি পাস করবে ২০১৮ ফেব্রুয়ারি তে, তোমার জন্য পসিবল অপশন হল ২০১৮ এর ফল(৭ টার্মের রেজাল্ট দিয়ে) অথবা পরের যেকোন সেশন। ২০১৮ এর ফলের জন্য ২০১৭ এর ডিসেম্বরেই সব এপ্লিকেশন করতে হবে। সাধারণত এপ্লিকেশন ডেডলাইনগুলা থাকে ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ এর আশেপাশে।
অনেকের ধারণা, এপ্লাই করতে বা ইউএসএতে আসতে অনেক টাকা লাগে। আমার হাতে এখন এত টাকা নাই, ২ বছর চাকরী করি, এরপর যাবো। এবার ইউএসএ তে আসার খরচের একটা নমুনা দেই। (বলে রাখা ভালো, এটা শুধুই একটা নমুনা, স্টেটভেদে, ইউনিভার্সিটি ভেদে খরচ/আয় ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, তবে এই নমুনা তে একটা এভারেজ পিকচার দেখানোর চেষ্টা করেছি।)
GRE | $205 | 16,400/- |
TOEFL | $170 | 13,600/- |
GRE score report (4 free, 4 paid) | $108 | 8,640/- |
TOEFL score report (4 free, 4 paid) | $80 | 6,400/- |
Official Document Sign (8 set, 300taka each) | 2,400/- | |
Document Sending (2000 each) | 16,000/- | |
Application Fee (on average $90 each) | $720 | 57,600/- |
Sevis Fee | $200 | 16,000/- |
Visa Fee | 12,640/- | |
Initial shopping | 40,000/- | |
Plane Fare (depends on the state) | 80,000/- | |
First month house rent | $500 | 40,000/- |
Initial cost at USA | $600 | 48,000/- |
Total | 3,57,680/- |
এখানে অনেক বেশি করে ধরেছি, তবে আনুমানিক ৩ লক্ষ টাকার মত খরচ হয়।
এবার আসি ইউএসএ তে এসে আয় ব্যয় কেমন হবে সেই বিষয়ে,প্রায় সব ভার্সিটিতেই পিএইচডি ফুল ফান্ডেড। এর মানে, তোমার কোন টিউশন ফি দেয়া লাগবে না। তুমি মাসশেষে একটা স্টাইপেন্ড পাবে। প্রায় সব ভার্সিটি পিএইচডি স্টুডেন্টদের টিচিং এসিস্ট্যান্ট/রিসার্চ এসিস্টেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়। শহর ভেদে ফান্ডিং এমাউন্ট ভিন্ন ভিন্ন হয়। তবে মোটামুটি ১৫০০/১৬০০ ডলার হাতে থাকে ট্যাক্স কাটার পর। এখন আসি এখানে খরচ কেমন সেই ব্যাপারে। যদি একটু কষ্ট করে নিজে রান্না করে খাও, আর বাইরে কম খরচ কর তাইলে মোটামুটি ৮৫০ ডলারের মধ্যে ১ জন খুব ভালোভাবেই চলা সম্ভব। তাইলে হাতে থাকে ৬৫০/৭৫০ ডলারের মত। অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় ৫২০০০-৬০০০০ টাকা। অর্থাৎ ৬ মাসের মধ্যে খরচের ৩ লক্ষ টাকা উঠে আসবে। অনেক দেশ থেকে অনেকেই লোন নিয়ে আসে। আমাদের দেশে এরকম লোন এর ব্যবস্থা থাকলে খুব ভালো হত।
পরের পর্বে প্রফেসরদের কিভাবে, কোন সময়ে মেইল করতে হয় এই নিয়ে কথা বলব।