Department of CSE, BUET

BSADD - BUET System Analysis, Design and Development community

  • Home
  • Gallery
  • Activities
  • B'Links
  • BSADD Blog
  • BSADD Connect
  • About
  • BSADD Blog

  • Overview
  • Episode 01 (Australia)- Live Session with Nafis Ul Islam Bhai and Shaila Pervin Apu
  • Live session with Imdad vai and Mitrasree apu

CS Life Beyond the Border (Session-01)



Guest :
  Nafis Ul Islam
   Software and Application Engineer at TELEAUS, Australia
  Shaila Pervin, PhD
   Research Staff Member at IBM, Australia
Host :
  Shashata Sawmya
  Mahmud Mushfique

Writer :
  Asif Haider

Description of the Interview (Q/A)

১/ শায়লা পারভীন আপু, আপনি বুয়েট থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর থেকে দীর্ঘ ১২ বছরের মতো সময় ধরে অস্ট্রেলিয়াতে আছেন। ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জনের পর থেকে বর্তমানে একজন সফল গবেষক হিসেবে আপনার পথপরিক্রমা সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু যদি বলতেন-

শায়লাঃ আমি এইচএসসি ২০০১ ব্যাচ ছিলাম, ২০০৭ এর শেষের দিকে বুয়েট সিএসই থেকে গ্র্যাজুয়েশন সমাপ্ত করি। এরপর ‘এরিকসনে’ সল্যুশন ইন্টিগ্রেটর হিসেবে যোগদান করি, যেখানে মূলত সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কাজ করতে হতো। এরপর ২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটি থেকে ইনফরমেশন টেকনোলজির উপর ডক্টরেট ডিগ্রি সম্পন্ন করি। পোস্টডকটোরাল রিসার্চার হিসেবে তারপর আইবিএম, মেলবোর্নে যোগদান করি। বর্তমানে এখানেই রিসার্চ স্টাফ হিসেবে কর্মরত আছি।

২/ নাফিস উল ইসলাম ভাইয়ার কাছেও অনুরোধ থাকবে, আপনার পথপরিক্রমা সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু বলার জন্য-

নাফিসঃ আমি এইচএসসি ২০১১ ব্যাচের ছিলাম, আর আমার গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন হলো ২০১৭ তে। এরপর আমাদের কয়েকজন সহপাঠী মিলে ‘রিভ সিস্টেমস’এ সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে যোগদান করি। একটা সরকারি প্রজেক্টের অংশ হিসেবে সেখানে প্রায় চার মাসের মতো কাজ করি। এসময়ই মূলত অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকি। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে আমি মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্সের জন্য ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করি। তবে আমার মাস্টার্স পুরোপুরি রিসার্চ-ওরিয়েন্টেড ছিলোনা। ইন্ডাস্ট্রিই আমাকে সবসময় টানতো বেশি।

ইউনিভার্সিটি অফ মেলবোর্নে ডিসটিঙ্কশন সহ আমার পড়ার স্বপ্ন ছিল শুরু থেকেই। যাত্রাটা সহজ ছিল না, তবে আলহামদুলিল্লাহ ২০১৯ সালের জুলাইয়ে আমি ডিসটিঙ্কশনসহ মাস্টার্স বাই কোর্সওয়ার্ক সম্পন্ন করি।

এরপরই মূলত আসল চ্যালেঞ্জ শুরু হয়, ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জন্য একটা ভালো জব খুঁজে বের করা। এক্ষেত্রে শায়লা আপু সহ অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য বুয়েটিয়ান এলামনাইরাও অনেক সহযোগিতা করেছিলেন। আমি নিজেকে ভাগ্যবান বলব, কারণ জুলাইয়ে মাস্টার্স শেষ করার পর আমি আগস্টের শেষের দিকে ‘টেলিঅস’ এর জবটা কনফার্ম করি এবং অক্টোবর নাগাদ যোগদান করি।

৩/ আমাদের অনেকেরই একটা বড় দুশ্চিন্তা থাকে আন্ডারগ্র্যাজুয়েটের থিসিস নিয়ে। আপুর কাছে একটা খুবই কমন প্রশ্ন দিয়ে শুরু করবো- আপনি কিভাবে সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে আপনি পিএইচডি করবেন/ রিসার্চ সেক্টরেই থাকবেন?

শায়লাঃ আসলে একেকজনের জন্য একেক রকম মোটিভেশন কাজ করে। দেশের বাইরে নতুন পরিবেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আসাটা কিন্তু আমাদের জন্য একটা বড় ব্যাপার- এটা ছিল একটা অনুপ্রেরণার জায়গা। তবে আমি যে শুরু থেকেই একাডেমিয়া লাইনে থাকবো কিংবা রিসার্চ নিয়ে অনেক কাজ করবো- এমনটা কিন্তু ঠিক করা ছিল না। তবে আমি আমার কাজটাকে উপভোগ করি, বিশেষ করে পিএইচডি করলে রিসার্চ ফিল্ডে অনেকগুলো নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যায়, অনেক অপশন থাকে হাতে কাজ করার জন্য- এটাও আমার জন্য মোটিভেশন হিসেবে কাজ করেছিল।

৪/ অনুরূপ প্রশ্নটা ভাইয়ার কাছেও থাকবে- আপনি কিভাবে ঠিক করেছিলেন যে আপনি ইন্ডাস্ট্রি লাইনে/ জব সেক্টরেই কাজ করবেন?

নাফিসঃ এই চয়েসটা মূলত ব্যক্তিগত পছন্দের বা ভালোলাগার উপর নির্ভর করে। আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে অনেকেই বুঝে উঠতে পারে না বা লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেনা, যে আসলে কোনদিকে যাওয়া উচিত হবে। এক্ষেত্রে সিনিয়র বড় ভাইরা, এলামনাইগণ একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। খোলামেলাভাবে তাদের সাথে আলাপ করলে অনেক কিছু ক্লিয়ার হয়, তাদের মতামত/ সাজেশনও পাওয়া যায়। আমরা সবাই কমবেশি জানি পিএইচডি/রিসার্চ সেক্টরের সাথে ইন্ডাস্ট্রি জব সেক্টরের বেশ খানিকটা তফাত রয়েছে। সিনিয়রদের সাথে কথা বলে এবং নিজের আগ্রহ থেকেই আমি ইন্ডাস্ট্রিতে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এ প্রসংগে আরো একটা কারণ বলতে হয়, বুয়েট থেকে পাশ করার পর যখন রিভ সিস্টেমসে কাজ করেছিলাম, সেখানেই সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট বা ইন্ডাস্ট্রি এক্সপেরিয়ন্স বিষয়ক জিনিসগুলো আমাকে আকৃষ্ট করেছিল। সেখানে আমাদের খুবই আকর্ষণীয় একটা টিম ছিল। তখনই ঠিক করেছিলাম, উচ্চশিক্ষায় যেতে হবে, কিন্তু এরপর ইন্ডাস্ট্রিতেই ফিরে আসব।

৫/ যারা গ্র্যাজুয়েশন শেষের দিকে আছি, অস্ট্রেলিয়াতে যদি এখন কেউ পড়তে যেতে চায়, তাদের কি কি পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করেন বা কোন পরীক্ষাগুলো দিতে হবে?

শায়লাঃ অস্ট্রেলিয়ার জন্য ইংরেজি ভাষা টেস্ট (IELTS/TOEFL) ছাড়া অন্য কোনো পরীক্ষা দিতে হয়না। এর পাশাপাশি রিসার্চে আসতে চাইলে পটেনশিয়াল সুপারভাইজারের সাথে যোগাযোগ করে রিসার্চ প্রপোজাল লিখতে হয়, তবে সেটা অন্য সব দেশ/ভার্সিটির জন্যও প্রযোজ্য।

আমার সময়ের কথা যদি বলি, যেহেতু শুধু IELTSই যথেষ্ট আবেদন করার জন্য, সমসাময়িক কানাডা/আমেরিকার চেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় সহজে/কম সময়ে শুরুতেই আবেদন করতে পেরেছিলাম। যদি অস্ট্রেলিয়ায় স্কলারশিপ না হতো, সেক্ষেত্রে পরে কানাডা/আমেরিকার জন্য জিআরই/অন্যান্য পরীক্ষাগুলো দিতে হতো।

পরবর্তী বছরগুলোতে নতুন যারা মোনাশ ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসার আবেদন করেছিলো তাদের জন্য স্বেচ্ছাসেবী গাইডলাইন দেবার সময়ও দেখেছি IELTS ছাড়া অন্য কোনো পরীক্ষা/স্কোরের জন্য কোনো বাড়তি সুবিধা নেই।

৬/ অনেকেরই প্রশ্ন থাকে, অস্ট্রেলিয়াতে ভর্তি আবেদনের ক্ষেত্রে সিজিপিএর ভূমিকা কেমন?

শায়লাঃ যদিও সিজিপিএ রিকোয়ারমেন্ট ভার্সিটি অনুযায়ী আলাদা হয়ে থাকে, তারপরও তুলনামূলকভাবে এখানে সিজিপিএর গুরুত্ব অনেক বেশি। উদাহরণস্বরূপ, বুয়েটে থেকে ৩.০০ এর কাছাকাছি সিজি নিয়েও অনেকে আমেরিকার ভালো ভালো জায়গায় পিএইচডির সুযোগ পেয়েছেন,এবং ভালোও করছেন। তবে এই রেজাল্ট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় শুরুতে ভর্তি/বৃত্তি পাওয়াটা কঠিন হয়ে যেতে পারে। যতদূর মনে পড়ে, মোনাশ ইউনিভার্সিটিতে আমার সময় ৩.৫/৩.৬ ছিল ন্যূনতম, অবশ্যই যত বেশি হবে সিজিপিএ, ততোই ভালো।

নাফিসঃ আমাদের সময়েও মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্সের জন্য ৩.৫ এর কাছাকাছি ছিল ন্যূনতম রিকোয়ারমেন্ট। আমার সাথেই অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে আসা আমার এক বন্ধুর (যার রিসার্চের প্রতি আগ্রহ ছিল) থেকে জানতে পারলাম বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে। চার হাজারের অধিক ভার্সিটি আছে আমেরিকায়, সেই তুলনায় এখানে ভার্সিটি সংখ্যা মাত্র ৪৩টি। রিসার্চ ফান্ডের একটা বড় অংশ কেন্দ্রীয়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বোর্ড কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়, যেখানে আবেদনের ক্ষেত্রে প্রতিবছর তুমুল প্রতিযোগিতা থাকে। মেলবোর্ন ভার্সিটির ক্ষেত্রে প্রায় ৮৫ শতাংশেরও বেশি Weighted Average Marks থাকতে হয় পিএইচডি প্রার্থী হতে হলে। এক্ষেত্রে কম নম্বরধারীদের জন্য ফান্ড পাওয়াটা কঠিন হয়ে যায়, যদিও ভার্সিটি অনুযায়ী এটা আলাদা হবে।

অস্ট্রেলিয়ার সেরা আটটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্টগুলো পুরো পৃথিবীর মধ্যে টপ ১০০তেই থাকে, এবং এখানকার রিসার্চ ফান্ডের ৭০ ভাগই এই আটটি ভার্সিটিতে পাওয়া যায়। তবে সব ভার্সিটির অনেক প্রফেসরের কাছেই ইন্ডাস্ট্রি নির্ভর ফান্ডিং থাকে, যেটার উপর কেন্দ্রীয় বোর্ডের হস্তক্ষেপ নেই। সেক্ষেত্রে প্রফেসর পজিটিভ থাকলে সিজিপিএ, IELTS স্কোর খুব একটা গুরুত্ব নাও পেতে পারে। তাই এই প্রক্রিয়াটা অনেকের জন্যই তুলনামূলক সহজ হতে পারে।

৭/ বর্তমান করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি Fall-2021 এ আবেদনের ক্ষেত্রে কীরূপ প্রভাব ফেলতে পারে?

শায়লাঃ যেহেতু এটা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি, তাই কী ঘটবে সেটা বলা মুশকিল। অস্ট্রেলিয়ায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জোরালো না হলে, খুব বেশি সমস্যা হবার কথা না।

নাফিসঃ আমিও একমত পোষণ করবো। অস্ট্রেলিয়ার কমিউনিটি, ইকোনমি অনেকটাই স্টুডেন্টনির্ভর, সরকারের পক্ষ থেকেও বিদেশী স্টুডেন্টদের অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে ফিরে আসার জন্য। সেক্ষেত্রে মনে হয় না, নতুন ইনটেকে বড় ধরনের সমস্যা হবে।

৮/ পিএইচডি স্কলারশিপ প্রতিদ্বন্দ্বীতার ক্ষেত্রে মাস্টার্স কোথায় করছি ( বুয়েটে বা বাইরের কোথাও ), সেটা কতটুকু ভূমিকা রাখে?

নাফিসঃ প্রথমত, ইদানীং অস্ট্রেলিয়ায় পিএইচডি আবেদনের পূর্বশর্ত হিসেবে প্রায় সব ভার্সিটির সার্কুলারেই মোটামুটি ২ বছরের মাস্টার্স ডিগ্রির কথা উল্লেখ থাকে। অগ্রাধিকার পেতে থিসিস ও পাবলিকেশনেরও একটা বড় ভূমিকা থাকে এক্ষেত্রে। তাই ব্যাচেলর থেকে সরাসরি পিএইচডিতে যাওয়াটা খুব একটা ভালো আইডিয়া না। বাংলাদেশে বা দেশের বাইরে ( চীন, সিংগাপুর কিংবা মালয়েশিয়া ) কোনো জায়গা থেকে মাস্টার্স করা থাকলে সেটা অবশ্যই একটা বিগ প্লাস পয়েন্ট।

শায়লাঃ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বললে, আমি নিজেই কিন্তু সরাসরি ব্যাচেলর থেকে পিএইচডিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ডক্টরেট লেভেলে রিসার্চের ধরন/ উপায় বুঝতেই অনেক সময় ও শ্রম চলে যায়। তাই মাস্টার্স থাকলে এক্ষেত্রে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়।

৯/ সরাসরি চাকরি নিয়ে কি অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়া সম্ভব?

শায়লাঃ এটা খুব একটা প্রচলিত নয়। সরাসরি বাংলাদেশে থেকে অস্ট্রেলিয়ায় চাকরির ব্যবস্থা করা কঠিন, যদিও কিছু কিছু কোম্পানি ব্যতিক্রম। যেমন আমাদের আইবিএমে রিসার্চের কাজে সিঙ্গাপুর/চায়না থেকে পিএইচডি করা কেউ কেউ স্পন্সরশিপ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছিল।

নাফিসঃ অস্ট্রেলিয়ায় বড় ইন্ডাস্ট্রি খুব বেশি নাই, বড় কোম্পানির ব্রাঞ্চগুলো থাকলেও রিক্রুট্মেন্ট মূলত আমেরিকা বা মূল শাখা থেকেই হয়। পারমানেন্ট রেসিডেন্সির (পি.আর.) আওতায় সহজেই জব পাওয়া যায়, তবে সেটা ভিন্ন জিনিস। যেমন কম্পিউটার সায়েন্সের ক্ষেত্রে ৫-৮ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে পি.আর. এর জন্য এপ্রোচ করা যায়।

১০/ অন্য ব্যাকগ্রাউন্ডের (মেকানিক্যাল বা অন্যান্য) মানুষদের সি.এস. লাইনে শিফট করাটা কতটুকু কঠিন হতে পারে?

শায়লাঃ আমার অভিজ্ঞতা বলে, এটাও নির্ভর করে ভার্সিটির উপর। ভার্সিটির রিকোয়ারমেন্ট দেখা যেতে পারে এক্ষেত্রে।

নাফিসঃ আমার সাথে মাস্টার্সের সময় আমি ডিজাইন/আর্কিটেকচারে ব্যাচেলর করা কয়েকজনকে পেয়েছিলাম যারা আমার সাথেই সি.এস. ওরিয়েন্টেড মাস্টার্স করেছে। সি.এস. লাইনে পিএইচডি করতে চাইলে অবশ্যই মাস্টার্স ইন কোর্সওয়ার্ক/ রিসার্চ সি.এস. লাইনে থাকতে হবে, তা না হলে খুব কঠিন হয়ে যায়।

মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির ক্ষেত্রে, সি.এস. লাইনে মাস্টার্স করতে চাইলে ব্যাচেলরে একই ব্যাকগ্রাউন্ডে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ কোর্স করে আসতে হয়, এবং কিছু থিসিস/প্রজেক্টওয়ার্কও দেখাতে হয়। পুরোপুরি অন্য ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে সি.এস. লাইনে আসতে গেলে সেক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়াতে এসে কিছু ফাউন্ডেশন সার্টিফিকেট কোর্স ( ১ বছরের মত) আছে, সেগুলো করে নিতে হয়।

১১/ ইউনিভার্সিটি সিলেকশনের সময় কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে?

শায়লাঃ আমি যেটা করেছিলাম, পছন্দের ভার্সিটিগুলোর রিকোয়ারমেন্ট আর আমার রেজাল্ট/পরিস্থিতি মিলিয়ে দেখেছিলাম, সেখান থেকে একটা মোটামুটি ধারণা পাওয়া যায়, আমার সম্ভাবনা কতটুকু। অস্ট্রেলিয়ার ভার্সিটিতে সাধারণত আবেদন করতে ফি লাগে না, তাই এক প্রিপারেশনেই বেশকিছু জায়গায় আবেদন করা যায়।

নাফিসঃ অস্ট্রেলিয়ায় জুলাই আর ফেব্রুয়ারিতে দুইটা সেশন। মাঝে মাঝে ভার্সিটিগুলো এপ্লাই ফি ছাড় দেয়। আর ভার্সিটি চয়েসের ক্ষেত্রে ডিপার্ট্মেন্টের আন্তর্জাতিক পরিচিতি/খ্যাতির কথা গুরুত্ব দেওয়া দরকার, যদিও ব্যক্তিগত পছন্দই সবার আগে।

১২/ ব্যাচেলরের থিসিসের বিষয় থেকে মাস্টার্স বা পিএইচডিতে অন্য কোনো দিকে/ বিষয়ে শিফট করতে চাইলে, সেক্ষেত্রে কেমন প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে?

শায়লাঃ স্কলারশিপের ব্যাপারটা কেন্দ্রীয়ভাবে নির্ধারিত হলেও প্রফেসরদের পছন্দ/ অগ্রাধিকার এক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। প্রফেসরদের রিসার্চ এরিয়ায় দক্ষতা আছে এমন স্টুডেন্টই তারা সাধারণত চান।

১৩/ মাস্টার্সের স্কলারশিপের বিষয়টা কি পিএইচডির থেকে আলাদা? ফুল ফান্ডেড মাস্টার্স স্কলারশিপ পেতে হলে কী কী করতে হবে?

নাফিসঃ পিএইচডির সাথে তো পার্থক্য আছেই, মাস্টার্স বাই রিসার্চ আর কোর্সওয়ার্কের মধ্যেও তফাত আছে। মাস্টার্স বাই কোর্সওয়ার্কের ক্ষেত্রে ব্যাচলর (বুয়েটের) রেজাল্ট, IETLS স্কোর কেমন, পাবলিকেশন আছে কিনা এসবের উপর বিবেচনা করে স্কলারশিপের সিদ্ধান্ত নেবে তারা। তবে ইদানিংকালে, এই স্কলারশিপ মূলত পার্শিয়াল, ফুল ফান্ডেড পাওয়া প্রায় অসম্ভব।

আর অন্যদিকে, মাস্টার্স বাই রিসার্চের জন্য মূলত এমন প্রফেসরদের খুজে বের করতে হবে, যাদের কাছে ইন্ডাস্ট্রি ফান্ড আছে। এক্ষেত্রে আগে থেকে নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ের ওপর দক্ষতা/ পাবলিকেশন থাকলে, এ ধরনের ইন্ডাস্ট্রি ফুল ফান্ডে মাস্টার্স স্কলারশিপ জোগাড় করা সহজ হয়ে যায়।

১৪/ ডে টু ডে পিএইচডি লাইফের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? পিএইচডিকালীন সময়ে আর্থিক অবস্থার বিষয়গুলো কেমন ছিল?

শায়লাঃ এটাকে অনেকটা রেগুলার জবের মতোই বলা যায়, যদিও মনে হয় যেন সারাদিন কাজের মধ্যেই আছি। আগের পিএইচডি লাইফে ফিরে যেতে পারলে আরেকটু ডিসিপ্লিন্ড হওয়ার চেষ্টা করতাম, যাতে চাপ কম পড়ে, সমাজের/ পরিবারের জন্য যাতে আরেকটু সময় দেওয়া যায়।

তবে অস্ট্রেলিয়ার লেখাপড়ার পরিবেশ অনুকূলে ছিল, স্বাধীনভাবে অনেক সময়ও কাটানো যেত। সব ভার্সিটির ক্ষেত্রেই লিভিং এক্সপেন্সের পরিমাণ প্রায় একইরকম থাকে। আর্থিক বিষয়টা ক্যাম্পাস কোন শহরে বা কতদূরে অবস্থিত সেটার সাথেও সম্পর্কিত। তবে খরচের বিষয়টির সুবিধার্থে ওয়ার্ক পারমিটেরও ব্যবস্থা রয়েছে।

১৫/ একাডেমিয়া/ পিএইচডি থেকে ইন্ডাস্ট্রিতে এপ্রোচ করাটা কিরকম কঠিন বলে মনে হয়?

শায়লাঃ অস্ট্রেলিয়াতে রিসার্চ জবের সুযোগ অত বেশি না থাকায় আমার সমসাময়িক যারা পিএইচডি করেছিল, বেশিরভাগই ইন্ডাস্ট্রিতেই শিফট করেছিল। পিএইচডি শেষে একাডেমিয়ায় থাকা, কিংবা আমার মতো ইন্ডাস্ট্রি রিসার্চে আসার সুযোগ অস্ট্রেলিয়াতে সীমিত। এক্ষেত্রে, পিএইচডির পাশাপাশি টুকটাক প্রজেক্ট করে পোর্টফোলিও/অনলাইন প্রেজেন্স তৈরি রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।

নাফিসঃ যদিও পিএইচডিধারীদের যোগ্যতার প্রমাণ বেশি, তবুও যেহেতু পিএইচডির বিষয় ফোকাসড ও অল্প থাকে, এজন্য ইন্ডাস্ট্রিতে এপ্লাই করার সময় একটু বেছে এপ্লাই করা উচিত। আবার অস্ট্রেলিয়ায় পার্সোনাল প্রজেক্ট, গিটহাব, লিংকডইন প্রোফাইল এগুলোও গুরুত্বসহকারে দেখা হয়।

১৬/ প্রথম / দ্বিতীয় বর্ষে যারা আছে, তারা কিভাবে এখন থেকেই নিজেদের প্রস্তুত করে তুলতে পারে?

নাফিসঃ এখন যারা কারেন্ট স্টুডেন্ট আছে, তারা আমাদের সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন। সবারই উচিত লিংকডইন/ গিটহাবে প্রোফাইল গড়ে তোলা, ছোট ছোট প্রজেক্ট করে রিপোজিটরি পাবলিক করে রাখা, বিশেষ করে ব্যাচেলর্সে যেগুলো করানো হয়। এতে সবাই তোমার সম্পর্কে কমবেশি ধারণা পাবে, যেটা ইন্ডাস্ট্রি হায়ারিং এ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া অনেক জায়গায় কম্পিটিটিভ প্রোগ্রামিং এবং বেসিক বিষয় যেমন এলগোরিদম, ডাটা স্ট্রাকচার ইত্যাদিতে পারদর্শিতার অভিজ্ঞতাও চাওয়া হয়। বড় বড় কোম্পানিগুলো বেসিক জিনিসগুলোতেই অনেক জোর দিয়ে থাকে।

১৭/ সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি লক্ষ্য হলে, সেক্ষেত্রে মাস্টার্সের বিষয় নির্ধারণ কিরকম প্রভাব ফেলতে পারে? আর রিসার্চের অভিজ্ঞতা কতটুকু থাকা জরুরি?

নাফিসঃ যেকোনো ইন্ডাস্ট্রিতেই নিয়োগের সময় একাডেমিক রেজাল্ট বা কোন টপিকের ওপর দক্ষতা আছে, এগুলো দেখবেই। সেক্ষেত্রে যার যার পছন্দমত ও ভবিষ্যতে কাজের ক্ষেত্র রিলেটেড বিষয় বেছে নেওয়া যায়। যেমন আমি, সবকিছু বিবেচনা করেই ডিস্ট্রিবিউটেড কম্পিউটিং বিষয়টি বেছে নিয়েছিলাম, কারণ এতে অনেক ধরনের ইন্ডাস্ট্রি অপশন খোলা থাকে। অনেকেরই হয়তো হিউম্যান কম্পিউটার ইন্টারএকশন, ভার্চুয়াল কিংবা অগমেন্টেড রিয়েলিটি, ডেটা সায়েন্স- এ ধরনের স্পেশালাইজড সেক্টর পছ্ন্দ হতে পারে।

১৮/ বিদেশে অনেকেরই রেসিজম বা এই জাতীয় প্রতিবন্ধকতার অভিযোগ থাকে। সবকিছু মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ কেমন লেগেছে?

শায়লাঃ আমি ব্যক্তিগতভাবে এরকম কিছুর সম্মুখীন হইনি। যদিও আমার পক্ষে অন্য দেশের সাথে তুলনা করা কঠিন, তবে মনে হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার লাইফস্টাইল নিয়ে কারো অভিযোগ থাকার কথা নয়।

নাফিসঃ আমি এখানে আছি তিন বছরের মত হলো, আমার কাছে মনে হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার লাইফ অনেক উৎসবমুখর। এখানকার বাসিন্দারাও হাসিখুশি এবং কাজের চাপ নেয় না বললেই চলে। বর্ণ/ধর্ম জনিত কারণেও কখনো কাউকে বাঁধা পেতে দেখিনি। কিছু ব্যতিক্রম থাকবেই, তবে সবকিছু মিলিয়ে জীবন কখনোই এখানে চ্যালেঞ্জিং মনে হয়নি।

১৯/ অস্ট্রেলিয়ায় প্রাইভেট ভার্সিটির শিক্ষার্থীদের কমিউনিটি কেমন? তাদের জন্য দেশে বা অস্ট্রেলিয়ায় বুয়েটিয়ান কমিউনিটি/ এলামনাইদের সাহায্য পাওয়া সম্ভব?

শায়লাঃ এটা আসলে নির্ভর করে কমিউনিটির ধরনের উপর। যেমন, এখানকার ‘ফিমেল বুয়েটিয়ান’, ‘ফিমেল সিএসই’ এরকম দুয়েকটা গ্রুপ আছে, যেগুলো খুবই হেল্পফুল। তবে নামেই বুয়েটিয়ান কমিউনিটি, এমন গ্রুপগুলোতে বুয়েটিয়ানরাই এলাউড হবেন, এটাই স্বাভাবিক।

নাফিসঃ এলাকা বা বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বিশাল বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ারদের কমিউনিটি এখানে আছে। কমিউনিটি পর্যায়ে বাইরের কেউ এলাউড না হলেও ব্যক্তিগত পর্যায়ে সাহায্য করতে সবাই আগ্রহী হবেন। আমি নিজেও বুয়েটের বাইরেও পরিচিত চুয়েটিয়ান, আইউটিয়ান এমন অনেকের কাছ থেকেই সাহায্য পেয়েছি বিভিন্ন সময়।

২০/ অন্যান্য দেশের তুলনায় অস্ট্রেলিয়ায় ডেটা সায়েন্স বা অন্যান্য টপিকের মাস্টার্সের খরচ কি কম? সেখানকার মাস্টার্স ডিগ্রির টার্গেট করা কি ঠিক হবে?

নাফিসঃ ডাটা সায়েন্সের ডিগ্রি বর্তমানে অনেক জনপ্রিয়। তবে এখানকার মাস্টার্সগুলোর একটা বড় অংশ ফুল ফান্ডেড না, সাধারণত মাস্টার্স বাই কোর্সওয়ার্ক এবং পার্শিয়ালি ফান্ডেড। আমেরিকার সাথে তুলনা করলে, সেখানে সাধারণত ফুল ফান্ডেড ছাড়া কেউ যায়না, যেখানে অস্ট্রেলিয়ায় ফুল ফান্ড জোগাড় করা বেশ কঠিন। সেদিক থেকে পার্শিয়াল ফান্ড, থাকাখাওয়া সবকিছু মিলিয়ে আমি বলব, খরচ যথেষ্ট বেশিই। কিন্তু সুবিধার দিকটাও অনেক। যদিও মাস্টার্স পিএইচডি শেষে পার্মানেন্ট বাসিন্দা হওয়ার সুযোগ দিনদিন কমে আসছে, তবুও অন্য অনেক দেশ যেমন আমেরিকার তুলনায় অস্ট্রেলিয়ায় মাস্টার্স শেষ করে ধাপে ধাপে পার্মানেন্ট বাসিন্দা হওয়া ও চাকরি পাওয়ার পথটা বেশ সহজ। তখন ২ বছরের পড়ালেখার খরচ তুলে আনতে হয়তো ১ বছর সময়ও লাগবে না। তাই অস্ট্রেলিয়ায় সেটল হতে চাইলে মাস্টার্স করাটা ক্ষতির কিছু না, এমনকি আমার ক্ষেত্রেও এটা একটা পজিটিভ মোটিভেশন হিসেবেই কাজ করেছিল।


  • Comments
  • Go to all blogs